15.6 C
Munich
Wednesday, October 29, 2025

যে কষ্টগুলো আমাকে তাড়া করে – আফরোজা তালুকদার

Must read

দেশে এতো বেশি ত্রান বিতরণ হচ্ছে যে দরিদ্রদের আন্দোলন শুরু হয়েছে । তবে এজন্য হয়ত প্রধানমন্ত্রী সরাসরি দায়ী নন। দায়ী তারা, যারা ত্রান ব্যবস্থাপনায় আছেন। আর মাঠ পর্যায়ের প্রতিনিধি। তবে দায়ী যেই হোক ভুক্তভোগী সাধারণ জনগণ। তবে জনগণের একাংশ যারা নিম্নবিত্ত তারা চেয়ে খেতে পারছে । না দিলে আন্দোলন করতে পারে। একস্থানে না পেলে অন্যস্থানে গিয়ে চাইতে পারে। পাশের অবস্থিত উচ্চবিত্তদের নিকট হাত পেতে চাইতে পারছে । কিন্তু একবারও কি ভেবে দেখেছেন, যারা মধ্যবিত্ত, তারা কি এই জাতীয় কর্মকাণ্ড করতে পারবেন? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক এক সাংবাদিক জানালেন, তিনি কোনো একটি দৈনিক পত্রিকার কমিশনে কাজ করতেন । দুই একটা পত্রিকায় ফ্রিল্যান্সিং লিখতেন। তিনি জানান, জাতীয় প্রেসক্লাবের বা সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য তিনি। যাই হোক এই সকল কাজ করে তার সংসার সম্মানের সাথে চলে যেত। লকডাউনে প্রথম কিছু দিন ভালোই চলছিল তার সংসার। যত দিন যাচ্ছে ততই তার সংসারে খাদ্যকষ্ট হানা দিচ্ছে। ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে সারাক্ষণই ঘুমাই। কিন্তু না খেয়ে কি ঘুম আসে। সন্ধ্যায় উঠে দেখি সামান্য কিছু পান্তা পড়ে আছে। তাই কাঁচা মরিচ দিয়ে খেয়ে মনে হলো জীবন বাঁচল। খাদ্য কষ্ট সহ্য করতে না পেরে স্থানীয় কমিশনারের কার্যালয়ে ত্রানের জন্য নাম লিখিয়েছি‌ । কিন্তু ক‌ই ত্রান! কোনো ফোনও আসে না; ত্রানও আসে না। মনের কোনে ভাসে শুধু হতাশা। আর আমার ৮ বছরের ছেলেটির ক্ষুধার্ত মুখ। এখন শুধু মনে হয় ঐ ছোট্ট ছেলেটির ক্ষুধার কষ্ট পিতা হিসেবে দেখার পৃর্বে আল্লাহ তায়ালা আমার মরণ দিলেন না কেন। মিন্টু সরদার, যার খুচরা কাপড় এর দোকান ছিল। সকলে সচ্ছল ব্যবসায়ী হিসেবে তাকে চিনতেন, সে অনুযায়ী সম্মানও করেন। তিনি বলেন, আমার টাকায় আমিও আমার গ্রামে থাকা মা বাবা খেয়ে পড়ে খুব ভালো ছিলাম । দোকান মালামাল আছে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মানুষ, যা টাকা থাকে মালামার কিনে ফেলি। হাতে জমানো টাকা রাখিনা । দেশের বাড়ি পটুয়াখালী, তারাও আমার পাঠানো অর্থ দিয়েই জীবন-যাপন করতো। তিনি বলেন, ২০/২৫ হাজার টাকা নিয়ে লকডাউনে ঢুকে ছিলাম, ভাবিনি এতো দিন লকডাউন থাকবে। তার থেকে ১০ হাজার টাকা গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়েছিলাম। দুই বাচ্চাসহ খাবার খরচে ১৫ হাজার টাকা খরচ করে এখন সামান্য কিছুই অবশিষ্ট আছে। এদিকে গ্রাম থেকেও টাকা চায়, আমি এখন চিন্তা করছি, আমি দুই বাচ্চা নিয়ে খাব কি? গ্রামে বাড়ির সবাইতো আমার আশায় থেকে না খেয়ে আছে। আমার তেমন কোন আত্মীয়-স্বজন নাই, যাদের কাছে ধার করে চলতে পারি। আমার চারদিকে এখন শুধু অন্ধকার। বেঁচে থাকাটা এখন দুর্বিষহ মনে হচ্ছে। হয়তোবা যাদের দুই একজন উচ্চবিত্ত নিকট আত্মীয়-স্বজন আছে তারা ধার করে জীবন ধারণ করছেন, কিন্তু ধারই বা কতবার চাইবেন , তার উপর ধার শোধ করার বোঝা। যাক তবুও কিছু দিন ধার করেই না হয়, গুটিকয়েক লোক জীবনধারণ করলো! কিন্তু সিংহভাগ লোক আছেন, যাদের ধার দেওয়ার মত এমন লোক নেই, কিংবা লোক আছে, সেই লোকদের ধার দেয়ার মন মানসিকতা নেই। খাবার প্রায় শেষ, টাকাও শেষ। এখন তারা কি খাবে । কিভাবে চলবে। পেটে ক্ষুধা, মুখে লজ্জা! অনাহারে অর্ধাহারে চলছে এমন হাজারো মধ্যবিত্তের জীবন, যাদের দুঃখ কেউ বুঝে না। কারন যারা নিম্নবিত্ত তারা চেয়ে খায়, না দিলে আন্দোলন করে ছিনিয়ে নিয়ে খায়। যারা উচ্চবিত্ত তারা ব্যাংক থেকে তুলে আয়েশীভাবে জীবন যাপন করে, কিন্তু যারা মধ্যবিত্ত তারা কাজ করে খায়, কারোর টাকা চায়ও না, কাউকে না দিলে তাদের দিকে আঙুল তোলা হয় না। কারন যত কষ্টই হোক তারা মান-সম্মান রক্ষা করে নিজের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে হিসেব করে মাস চালায় । আজ এতো দিন এর লকডাউনে তারা কি কিভাবে চলছে? ২৬ তারিখে যখন লকডাউন হয়েছিল, তখন সমস্ত গোছানো ১৫-৩০ হাজার নিয়ে সরকার ঘোষিত লকডাউন পালন করার উদ্দেশ্যে তারা ঘর মুখি হয়েছিল। সেই গচ্ছিত টাকা এখন অনেক এর শেষ হয়েছে , কিংবা কিছু লোকের শেষ হতে চলেছে । তাই অনেকের জীবনে নেমে এসেছে করোনার থেকেও ভয়ংকর বিপদ। না কাউকে বলতে পারছেন, না কারো কাছে চাইতে পারছেন। না ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে পারছেন। সরকারের কোনো অনুদান তাদের নামে ঘোষিত হয়নি। দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা অনুদান চাইতে গেলে তাদের সম্মানবোধ জেগে উঠে। কিংবা অনেক জায়গায় সম্মানহানি করে কিছু চাইলেও কটাক্ষ করে বলা হয় অনুদান গরিবের জন্য। তখন তো মনেহয় আত্মহত্যা ও এর থেকে ভালো ছিল। মনের অগোচরে চলে আল্লাহ তুমি আমাদের মৃত্যু দাও। তবুও বাঁচিয়ে রেখে মৃত্যুর যন্ত্রনা দিয়ে তিলে তিলে মেরো না। আমার গৌরব ফাউন্ডেশন একটি নতুন সংগঠন। সংগঠন টির সাধ্য অনুযায়ী বেশ কয়েকটি পরিবার কে অনুদান প্রদান করেছে। সাধ্য থাকলে হয়তোবা আরও কিছু টা করতো। যাইহোক এই সংগঠন টির চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাদে শুনতে হয়েছে হাজার হাজার কষ্টে থাকা জীবনের গল্প। মধ্যবিত্ত হ‌ওয়ায় তাদের ভিতরে পাপ বোধের অনুশোচনা। হাহাকার আর কাউকে বলতে না পারার কষ্ট। যে কষ্ট গুলো আমাকে ঘুমাতে দেয়না। যে কষ্ট গুলো সর্বক্ষন আমাকে তাড়া করে। এর থেকে মুক্তি কি? বা কোথায়?

- Advertisement -spot_img

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

Latest article