10.7 C
Munich
Wednesday, October 29, 2025

ময়মনসিংহে ফেসবুক সাংবাদিকদের দৌরাত্ম

Must read

বদরুল আমীন: ময়মনসিংহ জেলা শহর সহ বিভিন্ন উপজেলা শহরে অলিতে গলিতে ব্যাংগের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছে নাম সর্বস্ব ভূয়া মানবাধিকার আর ভূয়া সাংবাদিক। এদের দৌরাত্ম্য অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে চরমে পৌঁছেছে।

যার মাধ্যমে প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এই ভূয়া মানবাধিকার সংগঠনের কারনে মানবাধিকার শব্দটি আজ আতংকের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তথাকথিত মানবাধিকার সংগঠন গুলোর কারনে ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষ মানবাধিকার এর উপর থেকে তাদের আস্থা ও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে।

পাশাপাশি সারা জেলা ব্যাপী চলছে তাদের কার্ড বাণিজ্য। যাদের মানবাধিকার সম্বন্ধে নূন্যতম জ্ঞানও নেই। তাদের হাতে সামান্য টাকার বিনিময়ে তুলে দেওয়া হচ্ছে মানবাধিকার কর্মীর আইডি কার্ড। তাদের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়ে থানা কমিটি এবং ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে জেলা কমিটি গঠনের অনুমোদনও দেয়া হচ্ছে।

ব্যাঙ্গের ছাতার মতো সারা দেশে খুলে বসেছে শাখা প্র-শাখা। এমনও অনেক সংগঠন আছে যারা সরকারের কোন সংস্থারই অনুমোদন না নিয়ে দীর্ঘ দিন থেকে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু মাত্র প্রেস লেখা আইডি কার্ড কেনাবেচাই যাদের মূল পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানবাধিকার নামক সংস্থায় কাজ করে ‘মুরগী আর পান ব্যবসায়ী’। চিহিৃত পেশাদার বাটপার-প্রতারক নামের আগে পিছে বসাচ্ছে সাংবাদিক। এদের কার্যক্রম পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। নিজের নাম লিখতে কলম ভাঙ্গে, সাংবাদিক বলতে গেলে উচ্চারণ করে বসে সামবাদিক। নিজের সংগঠনটির নাম পর্যন্ত বলতে পারে না। তারাই রাতারাতি মানবাধিকার কর্মী বা সাংবাদিক বনে গেছেন। ভূয়া সাংবাদিকদের সংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে খোদ অখ্যাত-কুক্ষাত কতিপয় পত্রিকার বিশেষ ভুমিকা রয়েছে। আর ফেসবুকে কপি বা এডিট করে অনলাইনে এডিট পোস্ট দিয়েই মস্ত বড় সাংবাদিক !

প্রায়ই থানার ভিতরে দারোগাদের সাথে গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডাবাজিতে মত্ত থাকে এরা । ‘দালাল’ হিসেবে ঘুষ বাণিজ্যে সরাসরি সহায়তা করে।

গোটা জেলা জুড়ে এখন ‘ভুয়া মানবাধিকার কর্মি আর ভূয়া সাংবাদিক’দের দৌরাত্ম্য অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে চরমে পৌঁছেছে। ভুয়া সাংবাদিকেরা বিভিন্ন প্রতারণার ফাঁদ পেতে কিংবা কোন কোন পতিতাকে নারী সাংবাদিক বানিয়ে জেলা বা বিভাগের বড়কর্তাদের দরবারে হাজির হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সকল নারী সাংবাদিকরা একাধিক বিয়ে ছাড়াও ফ্লাট বাসা ভাড়া নিয়ে একাই শহরে জীবন-যাপন করে। অনেক সরকারী/বেসরকারী কর্মকর্তা ও নেতা-কর্মীসহ কতিপয় দালাল সাংবাদিকদের মেয়ে সাংবাদিকদের বাসায় আসা-যাওয়া রয়েছে। এদের শিক্ষাগত কোন যোগ্যতাই নেই।

সাংবাদিক পরিচয়ে এরা নানা অপরাধ ও অপকর্মে জড়িত হয়ে পড়ছে। ভূয়া সাংবাদিক আর কথিত মানবাধিকার কর্মিদের নানা অপকর্মের কারণে প্রকৃত পেশাদার সাংবাদিকদের ভাবমূর্তি এখন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

বর্তমানে এফবি খোললেত কোন কথাই নেই সাংবাদিক আর মানবাধিকার নেতার অভাব নেই। এতে করে পেশাদার সাংবাদিকরা আজ নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করেন।

সাংবাদিকদের মতো বেশভূষায় সেজেগুজে বাইক নিয়ে সাংবাদিক লেখা স্টিকার লাগিয়ে একশ্রেণীর প্রতারক অলিগলি, হাট-বাজার চষে বেড়াচ্ছেন। পান থেকে চুন খসলেই রীতিমত বাহিনী নিয়ে হামলে পড়ছেন সেখানে। প্রকৃত ঘটনা কি-সে ঘটনার আদৌ কোনো নিউজ ভ্যালু আছে কি না, সেসব ভেবে দেখার ফুসরৎ তাদের নেই।

পেটে বোমা ফাটালেও দু’ লাইন লেখার যোগ্যতাহীন টাউট বাটপারের দল চাঁদাবাজিতে সিদ্ধহস্ত। ভূয়া সাংবাদিকের দৌরাত্ম্য নতুন নয়, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তা বেড়ে অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে।

সাংবাদিক না হয়েও সাংবাদিকতার বেশভূষা তাদের মূল পুঁজি। খ্যাত-অখ্যাত একাধিক গণমাধ্যমের ৪/৫টি আইডি কার্ড বুকে পিঠে ঝুলিয়ে দাপিয়ে বেড়ায় সর্বত্র।

দালালী আর তদবির করার কারনে ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন দপ্তরের ও জেলা পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তার অফিস সহকারী বা কেরানী কিংবা স্টাফ অফিসারদের সাথে এসকল ভূয়া ও ফেসবুক মার্কা সাংবাদিক বা মানবাধিকার কর্মীদের সাথে রমরমা খাতির। ফলে তাদের যে কোন অনুষ্ঠানে এসকল ভূয়াদের ডাক পরে সর্বপ্রথম। অনুষ্ঠানের বিভিন্ন ছবি কিংবা কর্মকর্তাদের সাথে সেলফি তুলে নিজ আইডিতে পোস্ট করে বনে যান তারা বড় সাংবাদিক। যে কারনে প্রকৃত সাংবাদিকরা এসকল দপ্তরে তেমন মূল্যায়িত হয় না। এগুলো প্রতিহত না করলে একদিন জ্ঞানী তুখোড় সাংবাদিকরা বিলুপ্তির খাতায় নাম লিখাবে।

- Advertisement -spot_img

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

Latest article